খার্তুমে সেনাবাহিনীর অগ্রগতি, আরএসএফ কোণঠাসা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৮ পিএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৫০ পিএম

সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে নতুন মোড় নিয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী রাজধানী খার্তুমে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর উপর কঠোর অবরোধ তৈরি করেছে এবং রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ দখলের দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই সংঘাতের ফলে দেশটি এক মারাত্মক মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে।

 

সোমবার (১৭ মার্চ) সুদানের সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে যে তারা রাজধানীর দক্ষিণে অবস্থিত সাঁজোয়া ইউনিটের সঙ্গে একীভূত হয়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর এটি প্রথমবারের মতো ঘটল। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নাবিল আবদুল্লাহ জানান, সেনারা আল-শাব টিচিং হাসপাতালকে আরএসএফ-এর দখল থেকে মুক্ত করেছে এবং জেনারেল কমান্ডের বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে। সেনাবাহিনীর এই অগ্রগতি যুদ্ধের মোড় পাল্টে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

এই নতুন অবস্থান সেনাবাহিনীকে কেন্দ্রীয় খার্তুমের দক্ষিণ প্রবেশপথগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে সহায়তা করেছে, যা পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হওয়ার কৌশলগত সুবিধা এনে দিয়েছে। এতে রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত আরএসএফ বাহিনীর জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আরএসএফ সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া ঘাঁটিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল এবং রসদ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সেনাবাহিনী পাল্টা অভিযান শুরু করলে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করে।

 

সাম্প্রতিক বিজয়ের ফলে সেনাবাহিনী এখন চারদিক থেকে রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে থাকা আরএসএফ বাহিনীকে ঘিরে ফেলেছে। খার্তুমের কেন্দ্রে অবস্থিত সরকারি ভবনগুলোর নিয়ন্ত্রণও সেনারা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, আরএসএফ বাহিনী এখনো শহরের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আরএসএফ-এর নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো সংকুচিত হচ্ছে এবং সেনাবাহিনী একের পর এক এলাকা পুনরুদ্ধার করছে।

 

এই বিষয়ে আরএসএফ এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে, বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো (হেমেদতি) শনিবার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, তার বাহিনী খার্তুম ছাড়বে না এবং রাষ্ট্রপতি প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ ছাড়বে না। যদিও বাস্তবতা বলছে, সামরিক বাহিনীর টানা আক্রমণে আরএসএফ-এর শক্ত অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে।

 

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তবে মার্কিন গবেষকদের মতে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ১,৩০,০০০-এর কাছাকাছি হতে পারে। সংঘাত ইতিমধ্যে সুদানের ১৮টি রাজ্যের মধ্যে ১৩টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, যা এক ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। খাদ্য সংকট এবং ত্রাণের অভাবে লাখ লাখ মানুষ অনাহারের মুখে পড়ছে।

 

বিশ্ব সম্প্রদায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে, কারণ এই সংঘাত শুধু সুদান নয়, গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সুদানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

 

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪১৩
হন্ডুরাসে নিহত ৬
রহস্যজনক ফেনা
যুদ্ধবিরতিতে সম্মত
চীনে সন্তান জন্মদান উৎসাহে নেয়া হচ্ছে নতুন পরিকল্পনা
আরও
X

আরও পড়ুন

গণঅধিকার পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কমিটি গঠন

গণঅধিকার পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কমিটি গঠন

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ তথ্য উপদেষ্টার

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ তথ্য উপদেষ্টার

করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার দাবি

করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার দাবি

শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলামের ১৬৩ ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকা অবরুদ্ধের নির্দেশ

শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলামের ১৬৩ ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকা অবরুদ্ধের নির্দেশ

যুক্তরাজ্য থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানিসহ ক্রয় কমিটিতে ৭ প্রস্তাব অনুমোদন

যুক্তরাজ্য থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানিসহ ক্রয় কমিটিতে ৭ প্রস্তাব অনুমোদন

আদালত চলতো হাসিনার নির্দেশে, মামলার রায় আসতো গণভবন থেকে: নুর

আদালত চলতো হাসিনার নির্দেশে, মামলার রায় আসতো গণভবন থেকে: নুর

সার্টিফিকেট ইস্যু না করায় রিট জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য রিমান্ড’

সার্টিফিকেট ইস্যু না করায় রিট জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য রিমান্ড’

দোহারের কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা: আসামি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুদণ্ড

দোহারের কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা: আসামি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুদণ্ড

কক্সবাজার শহরে উচ্ছেদের মুখে আতঙ্কগ্রস্থ হাজারো নারী-পুরুষ ঘরবাড়ি ও জমি রক্ষায় মানববন্ধন

কক্সবাজার শহরে উচ্ছেদের মুখে আতঙ্কগ্রস্থ হাজারো নারী-পুরুষ ঘরবাড়ি ও জমি রক্ষায় মানববন্ধন

কর্পোরেট জবাবদিহিতা ও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

কর্পোরেট জবাবদিহিতা ও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের মন্তব্যে তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের

মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের মন্তব্যে তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের

বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪১৩

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪১৩

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে

জ্বালানি সচিব-তিতাসের এমডিকে আদালত অবমাননার নোটিশ

জ্বালানি সচিব-তিতাসের এমডিকে আদালত অবমাননার নোটিশ

নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র!

নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র!

সোনার দামে নতুন রেকর্ড, ভরি ১৫৪৯৪৫ টাকা

সোনার দামে নতুন রেকর্ড, ভরি ১৫৪৯৪৫ টাকা

ঢাবিতে ছাত্রদলের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

ঢাবিতে ছাত্রদলের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

আনোয়ারায় ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত-জড়িতদের বসতঘরে জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা

আনোয়ারায় ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত-জড়িতদের বসতঘরে জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা

বার্জার ও সিএমপি-এর উন্নত কোটিং প্রযুক্তি যমুনা রেল সেতুকে দিচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা

বার্জার ও সিএমপি-এর উন্নত কোটিং প্রযুক্তি যমুনা রেল সেতুকে দিচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা